ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে (সর্বশেষ গাইড ২০২৫)

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে সাধারণত জন্ম নিবন্ধন, এসএসসি সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, বিদ্যুৎ বিল, পিতা-মাতা ও ভাইভোনের আইডি প্রয়োজন হয়। কি প্রমাণপত্র লাগবে তা নির্ভর করে আপনি কি তথ্য সংশোধন করতে চান। জানুন বিস্তারিত।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে

ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) শুধু ভোট দেওয়ার জন্যই নয়, এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)। ব্যাংক একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, ট্যাক্স, সিম রেজিস্ট্রেশনসহ সব সরকারি-বেসরকারি কাজেই এনআইডি বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে।

কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম, জন্ম তারিখ ঠিকানায় ভুলের কারণে পাসপোর্ট তৈরি, ব্যাংক একাউন্ট খোলাসহ জরুরী কাজে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের প্রয়োজন হয়।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সংশোধনের ধরন অনুযায়ী কাগজপত্র ভিন্ন হয়, তবে সাধারণভাবে নিচের ডকুমেন্টগুলো যেকোনো এক বা একাধিক লাগতে পারে:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (পিইসিই/ জেএসসি/ এসএসসি বা তার উর্দ্ধে)
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • সন্তানদের পাবলিক পরীক্ষার সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র
  • সার্ভিস বই বা এমপিও শিট
  • বিবাহের কাবিন নামা
    এগুলো ছাড়া পরিস্থিতি অনুযায়ী অন্যান্য গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্রও দেয়া যেতে পারে।

১. নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে?

নিজ নামের বানান বা আংশিক পরিবর্তন

যদি নামের বানান ভুল হয় বা সামান্য পরিবর্তন দরকার হয়, তাহলে নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক ডকুমেন্ট দিতে হবে:

  • পাবলিক পরীক্ষার সনদ (পিইসিই/জেএসসি/এসএসসি/সমমান)
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • সন্তানদের সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র
  • সার্ভিস বই বা এমপিও কপি
  • বিবাহের কাবিন নামা

বাংলা নাম অনুযায়ী ইংরেজি বা ইংরেজি অনুযায়ী বাংলা সংশোধন

বাংলা নাম বা ইংরেজি নামের মধ্যে পার্থক্য থাকলে, জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি প্রয়োজন হয়।

সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন

যদি পুরো নামই পরিবর্তন করতে চান, সেক্ষেত্রে দরকার হবে:

  • পাবলিক পরীক্ষা সনদ
  • জন্ম নিবন্ধন
  • পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • হলফনামা
  • সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা সনদ
  • উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রতিবেদন

২. পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে

  • পাবলিক পরীক্ষা সনদ
  • জন্ম নিবন্ধন
  • পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • পিতা-মাতা ও ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র
  • ভাই-বোনের পাবলিক পরীক্ষা সনদ
  • বিবাহের কাবিন নামা বা সার্ভিস বইয়ের কপি

৩. স্বামী বা স্ত্রীর নাম সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ডে স্বামী বা স্ত্রীর নাম সংশোধনের জন্য নিচের ডকুমেন্ট যেকোনোটি দিতে পারেন:

  • বিবাহের কাবিন নামা
  • সন্তানদের সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র
  • অন্যান্য সম্পর্কিত প্রমাণপত্র

৪. জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কি কি লাগে

ভুল জন্মতারিখ অনেকের ক্ষেত্রেই সাধারণ সমস্যা।
জন্ম তারিখ ৫ বছরের মধ্যে সংশোধন বা পূর্ণ সংশোধন করতে নিচের ডকুমেন্টগুলো দরকার হয়:

  • পাবলিক পরীক্ষার সনদ বা রেজিস্ট্রেশন কার্ড
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • জন্ম নিবন্ধন
  • সিভিল সার্জনের মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট (বয়স প্রমাণের জন্য)
  • চেয়ারম্যানের পারিবারিক সনদ
  • সার্ভিস বই বা এমপিও শিট
  • পেনশন বা অবসর ভাতা বইয়ের কপি

ঠিকানা সংশোধন করতে কি লাগে

  • সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের সনদ
  • জমির দলিল
  • বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাসের বিল
  • জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্ট
  • অন্যান্য প্রমাণপত্র

বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য দরকারি কাগজপত্র

  • বিবাহের কাবিন নামা
  • হিন্দু বা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এফিডেভিট
  • সন্তানদের সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র
  • বিবাহ বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
  • স্বামী/স্ত্রীর মৃত্যুসনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

জন্মস্থান সংশোধন করতে কি লাগে

  • ইউনিয়ন পরিষদ / পৌরসভা / সিটি কর্পোরেশনের সনদ
  • পাসপোর্ট
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ

পেশা পরিবর্তনের জন্য প্রমাণপত্র

  • নিয়োগপত্র
  • পেশা ভিত্তিক সনদ
  • স্থানীয় পরিষদের সনদ
  • অন্যান্য প্রমাণপত্র

ছবি, স্বাক্ষর, আঙুলের ছাপ বা আইরিশ পরিবর্তন

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে স্ক্যানারের মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখা হয়। অথবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রত্যয়ন প্রয়োজন হয়।

দেখুন: ভোটার আইডি কার্ডের ছবি পরিবর্তন করার নিয়ম

এনআইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন কিভাবে করবেন?

বর্তমানে অনলাইনেই সহজে সংশোধনের আবেদন করা যায়।

  • ধাপ ১ঃ services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
  • ধাপ ২ “Apply for correction” অপশন সিলেক্ট করুন।
  • ধাপ ৩ঃ যে তথ্য পরিবর্তন করতে চান তা নির্বাচন করুন এবং প্রমাণপত্র আপলোড করুন।
  • ধাপ ৪ঃ ফি প্রদান করুন (Bkash, Nagad, Rocket ইত্যাদির মাধ্যমে)।
  • ধাপ ৫ঃ আবেদনটি অনুমোদনের পর SMS বা ইমেইলে জানানো হবে।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে?

তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ৭ থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সংশোধন সম্পন্ন হয়। তবে ভুলের ধরণ, প্রমাণপত্র, এবং স্থানীয় অফিসের কাজের চাপ অনুযায়ী সময় কিছুটা বাড়তে পারে।

শেষ কথা

মনে রাখবেন, সঠিক ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র না দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই সবসময় সত্যায়িত ও সরকারি স্বীকৃত কাগজপত্র জমা দিন।

জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা, আয়কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত আরও তথ্য জানতে নিয়মিত ভিজিট করুন এনআইডি বিষয়ক তথ্য

Similar Posts

Leave a Reply