অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ২০২৫

১৬ বছর বয়স হলেই আপনি অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র করার আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে। এরপর বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়ার পর আবেদন অনুমোদন হলে এনআইডি কার্ড পাবেন।

অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

নতুন ভোটার নিবন্ধন ২০২৫ সময়সূচী জানুয়ারী থেকে মার্চের মধ্যেই ছিল। এই সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার নিবন্ধন ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। তবে অনলাইনে আবেদন করে সারাবছর যে কোন সময়েই আপনি ভোটার হতে বা জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এনআইডি কার্ডের আবেদন বা নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কি কি লাগবে, কিভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন বিস্তারিত প্রক্রিয়া এই ব্লগে তুলে ধরা হলো।

নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্যতা

অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন করার জন্য আপনার বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর হতে হবে। আপনার বয়স 16 বছর বা তার বেশি কিন্তু এখনো জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধন না করে থাকেন, অনলাইনে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদন করতে নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে:

  • বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • বয়স 16 বছরের কম নয়।
  • পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধন করা হয়নি।

ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে SSC সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন, পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র, নাগরিকত্ব সনদ লাগে। এছাড়া, পিতা ছাড়া রক্তের সম্পর্কের ২ জন আত্মীয়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি এবং ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে ইউটিলিটি বিলের কপি, বাড়ি ভাড়ার রসিদ বা হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ প্রয়োজন হতে পারে।

অনলাইনে আবেদন করার পর, আবেদনের প্রিন্ট কপি ও নিম্মোক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • অনলাইন জমা দেওয়া ফর্মের প্রিন্ট কপি
  • S.S.C. অথবা সমমানের সার্টিফিকেট (বয়স প্রমাণের জন্য)
  • জন্ম সনদ (বয়স প্রমাণের জন্য)
  • পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / টিন সার্টিফিকেট (বয়স প্রমাণের জন্য)
  • বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি (অবশ্যই)
  • ইউটিলিটি বিলের কপি/বাড়ি ভাড়ার রসিদ/হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ (ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে)
  • নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য হিসাবে)
  • নতুন ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা (প্রযোজ্য হলে)

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার করার জন্য প্রথমে services.nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে অনলাইনে আবেদন করার পর ভোটার আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপনার উপজেলা অফিসে জমা দিন। আপনার আবেদন যাচাইয়ের পর বায়োমেট্রিক তথ্য নেয়ার জন্য ডাকা হবে। আবেদন অনুমোদন হলেই জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি তৈরি হবে।

একনজরে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করার ধাপসমূহ:

  • NID Application System এ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন;
  • ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন;
  • অনলাইন আবেদন জমা করুন;
  • আবেদন ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন;
  • বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করুন;
  • জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড/ সংগ্রহ করুন।

এনআইডি স্মার্ট কার্ড তৈরি হয়েছে কিনা তা চেক করতে দেখুন- স্মার্ট কার্ড চেক অনলাইন

আবেদনটি নির্বাচন অফিসে জমা দেয়ার পর ভেরিফিকেশন শেষে আপনাকে ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার জন্য ডাকা হবে এবং আপনাকে একটি ভোটার নিবন্ধন স্লিপ দেয়া হবে। এর ১০-১৫ দিনের মধ্যেই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনটি অনুমোদিত হলে আপনি অনলাইন থেকে পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

আরও দেখুন: ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম

অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়াটি বিস্তারিত দেখানো হলো। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১- অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন

আপনি মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে NID Online Registration ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন (nid card er jonno abedon) করতে পারবেন।

অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে কারণ এখানে আপনি নিজের তথ্য নিজে দেখে শুনে প্রদান করছেন। এবং আপনার দেয়া তথ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রিন্ট হবে।

অনলাইনে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধনের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

১. এনআইডি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন

প্রথেমেই এই লিংকে Bangladesh NID Application System এ আপনার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নিচের ছবিতে দেখুন।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

আবেদন করুন বাটনে ক্লিক করুন।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করার নিয়ম

এখানে আপনার নাম, জন্মতারিখ ও ক্যাপচা কোডটি লিখে বহাল বা সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

তারপর আপনার মোবাইল ভেরিফিকেশনের জন্য মোবাইল নম্বর দিতে হবে। অবশ্যই আপনার সচল এবং এই মহুর্তে আপনার কাছে আছে এমন মোবাইল নম্বরটি দিবেন।

অবশ্যই আপনার বা যার আবেদন করছেন তার নিজের মোবাইল নম্বর দিতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে লগইন করার জন্য বা পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের জন্য নম্বরটি প্রয়োজন হবে।

আপনার মোবাইলে আসা ৬ ডিজিটের ভেরিফিকেশন পিন কোডটি লিখুন এবং বহাল বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।

অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন
অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন

এখানে আপনাকে একটি ইউনিক ইউজারনেম (Username) ও পাসওয়ার্ড (Password) সেট করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এই ইউজার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করে, জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড, সংশোধনের আবেদন ও অন্যান্য সেবা নিতে পারবেন।

ইউজারনেম ইংরেজি নাম ও সংখ্যার মিশ্রনে দিবেন এবং পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ৮ ডিজিটের হতে হবে।

যদি Username Already Exists ইউজারনেম ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে এমন সমস্যা দেখায়, ইউজারনেম পরিবর্তন করে পুনরায় চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন, আপনার ইউজারনেম অন্য কারে সাথে যেন না মিলে। তাই মাথা খাটিয়ে এটা লিখুন যেন ইউনিক হয়।

২. নতুন ভোটার আবেদন ফরম পূরণ

জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদনের সিস্টেমে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন হলে, আপনি নিচের মত একটি ড্যাশবোর্ড দেখবেন। যদি অটোমেটিক লগ ইন না হতে পারেন, আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে পারবেন।

এখান থেকেই, আপনার নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করবেন। প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করুন এবং উপরের ডান পাশ থেকে এডিট বাটনে ক্লিক করুন।

ব্যক্তিগত তথ্য অংশে সকল তথ্য এবং অবশ্যই আপনার পিতা ও মাতার নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখতে হবে। বড় ভাই/ বোনের তথ্য না দিলেও চলবে তবে দিতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য সুবিধা হতে পারে।

এর পর স্বামী/স্ত্রীর তথ্য বৈবাহিক অবস্থা অবশ্যই দিবেন, এবং স্বামী বা স্ত্রীর নাম জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে দিবেন।

এরপর অন্যান্য তথ্যে ক্লিক করুন। এখানে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও ধর্ম বাছাই করুন। অন্য তথ্যগুলো সম্ভব হলে দিতে পারেন, না দিলেও কোন সমস্যা হবেনা।

এরপর ৩য় অংশ ঠিকানা অপশনে যান এবং আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বাছাই করুন।

আপনার অবস্থানরত দেশ বাছাই করুন। তারপর আপনি বর্তমান নাকি স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হতে চান সেই ঠিকানার পাশে (ভোটার ঠিকানা) এর পাশে টিক দিন।

বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করুন এবং ভোটার এরিয়া নির্বাচন করুন।

পরবর্তী ধাপে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।

৩. কাগজপত্র আপলোড ও আবেদন জমা

এ ধাপে আপনার অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজগুলোর স্ক্যানড কপি বা ছবি আপলোড করতে হবে না। আপনার আবেদনের বিস্তারিত তথ্যসমূহ পুনরায় যাচাই করে নিন যাতে কোন ভুল না থাকে।

তথ্যসমূহ সঠিক থাকলে আপনার আবেদনটি নিশ্চিত করুন ও জমা দিন।

অনলাইনে আবেদন জমা হলে, ড্যাশবোর্ড থেকে আপনার আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড করে A4  সাইজ কাগজে প্রিন্ট করে নিন। এরপর আপনি যে এলাকায় ভোটার হচ্ছেন সে এলাকার নির্বাচন অফিসে আবেদনটি অন্যান্য কাগজপত্র সহ আবার জমা দিন। ব্যস, আপনার আবেদন প্রক্রিয়া শেষ।

ধাপ ২- ভেরিফিকেশন

আপনার আবেদনটি উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিস যাচাই বাছাই করবে। যাচাই করার জন্য আপনার সাথে তারা যোগাযোগ করতে পারে।

ধাপ ৩- বায়োমেট্রিক প্রদান

আবেদনটি যাচাই শেষে আপনার ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ (Biometric Information) নেয়ার জন্য ডাকা হবে। এর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে আপনার আবেদনটি অনুমোদিত হলেই আপনি অনলাইন হতে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

FAQs

ভোটার আইডি কার্ড করতে কোন টাকাই লাগে না।

আইডি কার্ডের ছবি তোলার ১ মাসের মধ্যেই NID পাওয়া যায়। তবে যখন নতুন ভোটার হালনাগাদের কাজ চলমান থাকে, তখন কাজের চাপ বেশি হওয়ার কারণে ২ থেকে ৩ মাস লাগতে পারে।

ভোটার তালিকার ডাটাবেজে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে শুধুমাত্র নাম সংযুক্ত করা হয়, কোন উপাধি বা অর্জিত পদবী তাতে সংযুক্ত করার সুযোগ নাই।

আপনি যে কোন সময়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

শেষ কথা

আপনার নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদনটি অনুমোদন হয়েছে কিনা তা চেক করতে পারবেন। আর যদি আপনি ইতোমধ্যে একবার ভোটার হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ২য় বার ভোটার আবেদনের কোন প্রয়োজন নাই। ডাবল ভোটার হয়ে থাকলে আপনার ২য় জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল করতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply